বাংলাদেশের শিল্প ও আর্থিক খাতের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস আর নেই। গত শনিবার ভোরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৪৯ সালের ৪ মার্চ কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস একাধারে ছিলেন একজন অগ্রপথিক, দূরদর্শী নেতা এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তিনি ড্রাগন গ্রুপ এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা।
দেশের সোয়েটার শিল্পের জনক হিসেবে পরিচিত মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন, যা লাখ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও নিবেদিত দেশপ্রেমিক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের উন্নতি ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেছিলেন।
গোলাম কুদ্দুসের প্রথম জানাজা গুলশান আজাদ মসজিদে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয়। এর পরে দ্বিতীয় জানাজা মরহুমের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চৌদ্দগ্রামের মিয়া বাজারে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। ক্ষণজন্মা শিল্পোদ্যোক্তা দেশের শিল্প, কর্মসংস্থান তথা দেশের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। কর্মসংস্থানমুখী শিল্পায়নের কারণে দেশের মানুষের কাছে আজীবন শ্রদ্ধার আসনে থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস । চৌকশ এ ব্যবসায়ী তার মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন ‘ড্রাগন গ্রুপ’। এই গ্রুপের অধীন তিনি অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ; যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের।
আস্থার জায়গায় অটুট থাকায় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ব্যবসায়িক পারদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ড্রাগন গ্রুপ, সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স, রুপালী ইন্সুরেন্স-এর মতো ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠাতা করেছেন স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন। মিয়াবাজার বাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে তার হাতে। ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ দান করে উজিরপুরবাসীর স্বপ্নপূরন করেছেন তিনি।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। ড্রাগন স্যুয়েটার এর মতো সুবিশাল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে তাকে।
দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখায় বেশ কয়েকবার সিআইপি পদকে ভূষিত হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-র টানা দু’বারের সফল সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দেশী-বিদেশেী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে দেশের জন্য বয়ে এনেছেন সুনাম আর সুখ্যাতি।
মিয়াবাজারবাসীর স্বপ্ন পূরনে করেছেন অত্যাধুনিক মিয়াবাজার মসজিদ মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্স।
এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য সৃষ্টি করেছেন নিজ এলাকায় বিশাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী। যেখানে কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক।
ব্যবসা-বাণিজ্যে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস যে চৌকশ ছিলেন, তা তার প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বৈচিত্রময় পর্যালোচনা করলেই এর প্রমাণ মেলে। দেশের ৪র্থ প্রজন্মের জীবন-বীমা সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স তার উজ্জল দৃষ্টান্ত।
এলাকারজন্য তার অনেক পরিকল্পনা ছিল। আমি আশা করব, তার ছেলেমেয়েরা ওনার এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করবেন। একই সঙ্গে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস-এর উত্তরসূরিরা মিয়াবাজরে চলমান শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজটিও সম্পন্ন করবেন, যেখানে আরও কর্মসংস্থান হবে। দেশের উন্নয়নে ড্রাগন গ্রুপের অবদান আরও বাড়বে-এমন প্রত্যাশা রেখে দেশের এই কৃতী শিল্পপতির মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
আকতার হোসেন সাদ্দাম
সম্পাদক ও প্রকাশক
আলোকিত ঢাকা
