১০টার মধ্যে হল না ছেড়ে ভেতরে ঘুমাচ্ছে জাবি শিক্ষার্থীরা

কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়তে রাজি না।

ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো আনাগোনা নেই। হলে অবস্থান নেয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঘুমিয়ে আছে। বেশ কয়েকটি আবাসিক হল ঘুরে ছাত্রদের কক্ষ ভেতর থেকে আটকানো অবস্থায় দেখা গেছে।

এদিকে সকাল ১০টার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে উপাচার্য ভবনের সামনে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন আছে।

এর আগে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সই করা এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ যারা মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে প্রশাসন।

এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা এখনও হলগুলোতে যাই নাই। আমি প্রক্টর অফিসে আছি। তাই হলগুলোর অ্যাকচুয়াল পরিস্থিতিটা জানি না।

হলে থাকা শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার নির্দেশের বিষয়ে অবগত কি না, সে বিষয়ে প্রক্টর বলেন, সবাই জেনেছে কি না, সেটা ঠিক জানি না। প্রভোস্টরা সবাই আছে এখানে। কিছুক্ষণের মধ্যে সব প্রভোস্ট যাবেন হলগুলোতে।

ক্যাম্পাস সংলগ্ন গ্রামবাসীদের হামলার শিকার হওয়ার পর শনিবার আন্দোলনে নামেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা তালা ভেঙে বন্ধ থাকা হলগুলোতে প্রবেশ করেন।

এদিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসসংলগ্ন গেরুয়া গ্রামের একদল বাসিন্দার হামলার শিকার হওয়ার পরদিন শনিবার আন্দোলনে নামেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তালা ভেঙে বন্ধ থাকা হলগুলোতে প্রবেশ করেন তারা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাণঘাতী করোনা থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও ১৯ মার্চ ২০২০ হতে অদ্যাবধি ক্লাস ও হল বন্ধ রয়েছে। তবে অনলাইন ক্লাস চালু রয়েছে।

এদিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখ সন্ধ্যায় কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কোনো কোনো আবাসিক হলে জোরপূর্বক প্রবেশ করে অবস্থান নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখ সকাল ১০টার মধ্যে নিজ উদ্যোগে হল ত্যাগ করতে নির্দেশ দিচ্ছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ থাকায় গেরুয়াসহ আশপাশের গ্রামে ঘর ভাড়া করে থাকেন কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গেরুয়া গ্রামে তাদের একটি ভাড়া বাসায় হামলা শুরু হয়। এ সময় অন্যান্য ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবরুদ্ধ করে ফেলেন।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, চার দিন আগে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটির জের ধরে এ হামলা চালানো হয়েছে। গেরুয়া গ্রামের স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দিয়ে বলা হয় ‘গ্রামে ডাকাত পড়েছে, গ্রামের মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে।’ এর কিছু সময় পরই লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে গ্রামবাসী। তারা শিক্ষার্থীদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে।

হামলার একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থীরা। রাত ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ। এরপর র‍্যাব-পুলিশ গেরুয়া গ্রামে প্রবেশ করলে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি জানান আন্দোলনকারী জাবি শিক্ষার্থীরা
এ ঘটনার বিচার, হল খুলে দেয়াসহ চার দফা দাবিতে শনিবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার পর শিক্ষার্থীরা প্রথমে ফজিলাতুন্নেসা হলের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপর একে একে সুফিয়া কামাল হল, প্রীতিলতা হলসহ মেয়েদের অন্যান্য হলগুলোর তালা ভেঙে সামনে এগোতে থাকেন তারা। পরে ছেলেদের আটটি হলের তালাও ভাঙা হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিচারসহ ছয় দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। এদিন রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গেরুয়া বাজারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক এলাকায় এখনও রয়েছে পুলিশের কড়া পাহারা। এই ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *