পঞ্চম দিনে বেড়েছে চলাচল, খুলছে দোকান

হামারি করোনার বিস্তার রোধকল্পে সরকার ঘোষিত ৭ দিনব্যাপী কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিন আজ সোমবার (৫ জুলাই)। করোনার সংক্রমণ রোধকল্পে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। লকডাউনের শুরু থেকেই বিভিন্ন জায়গায় টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্টে বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে গত তিন দিনের মতো রোববার (৪ জুলাই) চতুর্থ দিনেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতার ও জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয় পত্র দেখানো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে, তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন।

এদিকে লকডাউনের পঞ্চম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে; কিছু এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে দোকানপাটও খোলা হচ্ছে। সোমবার সকালের দিকে রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, পল্টন এলাকা ঘুরে গত কয়েকদিনের তুলনায় রাস্তায় প্রাইভেট কার ও লোকজনের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। আবহওয়া ভালো থাকায় রিকশায় যাত্রী পরিবহনও বেশি হচ্ছে।

শান্তিনগর মোড়ে কাজের সন্ধানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল একদল দিনমজুরকে, তাদের বেশিরভাগই মাস্ক পরেননি। কারো কারো মাস্ক থাকলেও তা গলায় ঝোলানো। রফিক নামে তাদের একজন বলেন, স্যার গরীব মানুষ। আমাগো করোনা ধরব না। করোনা গরীব মানুষ গো ধরে না। আমরা কাম পাই না। হেই বেয়ান বেলা থেইককা কামের জন্য রাস্তায় বইসা আছি। মাস্ক পইরা কী হইবে?

কাকরাইল, ফকিরাপুল, পল্টনের রাস্তায় বসানো চেকপোস্টগুলোতে প্রাইভেট কার থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, হাতিরপুল, বাংলামোটর, গ্রিনরোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে আগের কয়েক দিনের তুলনায় রিকশা ও মানুষ দুই-ই বেশি। এসব সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলও বেড়েছে। পুরান ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার ও পলাশীর অলিগলিতে দেখা গেল প্রধান সড়কে মানুষ ও রিকশা আছে বেশ। আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় রাস্তার পাশের মাছ, সবজি, মুদি দোকানগুলো খোলা রয়েছে। ক্রেতারাও গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন। আজিমপুর চৌরাস্তা, লালবাগ কেল্লার গেইট এলাকায় পুলিশ আছে, তবে তল্লাশির অত কড়াকড়ি নেই। রামপুরা, হাজীপাড়া, মালিবাগ এলাকার অলিগলিতে মানুষের আনাগোনা গত কয়েক দিনের চেয়ে বেড়েছে। বিধিনিষেধের মধ্যে পড়ে এমন কিছু দোকানপাটও খোলা হয়েছে। তবে পুলিশের টহল গাড়ি দেখলে দ্রুত ঝাঁপ নামিয়ে দিচ্ছেন দোকানিরা।

লকডাউনের পঞ্চম দিনে মানুষের চলাচল বেড়েছে মিরপুরেও। প্রধান সড়ক এবং গলিপথে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার সংখ্যা ছিল বেশ। পল্লবী এলাকায় দেখা গেল হেঁটেও অনেকে কাজে যাচ্ছেন। সবার মুখে মাস্কও দেখা যায়নি।

তাজুল ইসলাম নামের এক পোশাক কর্মী বলেন, যাচ্ছি অফিসে। মাস্ক পরে তো দূরের রাস্তা হাঁটা যায় না। ঘেমে গেছে, তাই পকেটে রেখে দিয়েছি; অফিসে গিয়ে পরব।

মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় ফার্নিচার, বেডিং স্টোর, স্যানিটারি পণ্য, ইলেক্ট্রনিক পণ্য ও কাপড়ের দোকান খোলা দেখা গেল। অনেক দোকানে শাটার অর্ধেক বন্ধ রেখে বিক্রি চলছে। বিসমিল্লাহ বেডিং স্টোরের মালিক ইমরান চৌকদার বলেন, কিছু অর্ডার ছিল। সেগুলার কাজ করছি। এতদিন বন্ধ ছিল, আজ খুলছি। চলতে তো হবে। পুলিশ আসলে দোকান অফ করে দেব।

লকডাউনের শুরুতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হওয়ায় রাজধানীতে প্রথম দিন ৫৫০ এবং দ্বিতীয় দিন ৩২০ জন, তৃতীয় দিনে ৬২১ জনকে এবং চতুর্থ দিনে ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে র‌্যাবের অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দেশব্যাপী বৃহস্পতিবার ১৮২ জনকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ টাকা এবং দ্বিতীয় দিনে শুক্রবারের অভিযানে ২১৩ জনের কাছ থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৪০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। লকডাউনের তৃতীয় দিনে ৩৪৬ জনকে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানায় ডিএমপি।

অপরদিকে লকডাউনের তৃতীয় দিনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় সারা দেশে ২৭৭ জনকে প্রায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাব। সারা দেশে ৩১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই অর্থদন্ড আদায় করেন।

লকডাউনের চতুর্থ দিনে অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হওয়ায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ( মিডিয়া) ইফতেখারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৬১ জনকে ৫৪ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ডিএমপি ট্রাফিক কর্তৃক ৪৯৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে ১২ লাখ ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

পাশপাশি সারাদেশে ৪৩৮ জনকে ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাব।

সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ নির্দেশনা জারি করে সরকার। ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই কঠোর লকডাউন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *