আলোচিত পাপিয়া দম্পতির রায় আজ

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলার রায় আজ সোমবার (১২ অক্টোবর) ঘোষণা করা হবে।

ঢাকার ১ নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করবেন।

এদিকে পাপিয়া দম্পতির রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে, এ জন্য সর্বোচ্চ সাজায় প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

অন্যদিকে মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হওয়ায় আশঙ্কায় রয়েছে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, আলোচিত দুটি মামলার বিচার আমাদের আদালতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি মামলায় সাহেদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত হয়েছে। আরেকটি পাপিয়া দম্পতির মামলার রায়ের দিন আজ সোমবার ধার্য রয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আর সম্পূন্নভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, পাপিয়া ও তার স্বামীরও সর্বোচ্চ সাজা দেবেন আদালত।

অপরদিকে পাপিয়ার দম্পতির আইনজীবী শাখাওয়াত উল্যাহ ভূঞা বলেন, আমরা শুরু থেকে দাবি করে আসছি এটা একটা সাজানো মামলা। হয়রানি করার জন্য তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার দেখানো হয়েছে। সাক্ষীদের জেরায় আমরা এটা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আসামিরা অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে জড়িত না। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।

তিনি বলেন, মাত্র ১২ কার্যদিবসে মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে। আগে এত দ্রুত এ রকম কোনো মামলার বিচার শেষ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। রাষ্ট্রপক্ষ কেন এত দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করতে তৎপর তা বুঝতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই নম্বর বহির্গমন টার্মিনালের ছয় নম্বর স্টাফ গেটের সামনে থেকে পাপিয়া দম্পতিকে আটক করা হয়। দেহ তল্লাশি করে পাপিয়ার কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমানের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও বিদেশি অর্থ; সহযোগী আসামি সাব্বির খন্দকারের কাছ থেকে একাধিক পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, জাল নোট; শেখ তাইবা নূরের কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও দুটি ডেবিট কার্ড উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া দম্পতির দেওয়া তথ্যানুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসায় ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, বিদেশি মদ, নগদ অর্থ ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি করে দুটি ও বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এছাড়া অবৈধ পাঁচ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত ২৯ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুজ্জামান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন। ঢাকার ১ নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক ১৮ আগস্ট আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন।

গত ২৩ আগস্ট একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ছয় কার্যদিবসে মোট ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ শুনানিতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।

এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেন। ওইদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১২ অক্টোবর ধার্য করেন।

এদিকে এখন পাপিয়া দম্পতি কারাগারে রয়েছেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *